কত সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে: এক ঝলকে বিগত দশকের পরিবর্তন ও প্রভাব

কত সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে

বাংলাদেশে ই-কমার্স শিল্পের প্রসার একটি বিস্ময়কর যাত্রার দলিল। ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে এই ধারণা যখন বাংলাদেশে প্রথম প্রবর্তিত হয়, তখন অনেকেই এটি অনিশ্চিত এক উদ্যোগ হিসেবে দেখেছিলেন। তবে, ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের প্রসার এবং মোবাইল প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ই-কমার্স শিল্প বাংলাদেশে তার জায়গা দৃঢ় করে নেয়। বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার ও এর প্রভাবের উপর গভীর দৃষ্টিপাত করেছে এবং কত সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে এ নিয়ে আলোচনা করা হোলো।

ই-কমার্সের সূচনা:

ই-কমার্সের ধারণা বাংলাদেশে প্রথম আবির্ভূত হয় ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে। তখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল খুবই কম এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমও ছিল অনুন্নত। তবুও, কিছু পথিকৃন প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য বিক্রি শুরু করে। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত “ই-ক্যাফে” ছিল বাংলাদেশের প্রথম ই-কমার্স ওয়েবসাইট। এরপর ২০০০ সালের দিকে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন “কম্পিউটার সিটি”, “ওয়ার্ল্ডক্লিক”, “আইক্যাশ” ইত্যাদি অনলাইনে তাদের ব্যবসা শুরু করে।

ধীর গতিতে প্রসার:

প্রথম দিকে ই-কমার্সের প্রসার ছিল খুবই ধীর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম থাকা, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের অবিশ্বাসযোগ্যতা এবং ডেলিভারি সিস্টেমের অপরিকল্পিততার কারণে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে দ্বিধাবোধ করত।

২০১০ সালের পর থেকে:

২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের দ্রুত প্রসার শুরু হয়। স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি, মোবাইল ইন্টারনেটের প্রসার এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের ফলে অনলাইনে কেনাকাটা অনেক সহজ ও সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। “রকমারি”, “আলিবাবা”, “চালডাল”, “পাতলা”, “ই-ক্যাশ” ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উদ্ভাবনী ধারণা ও গ্রাহকবান্ধব নীতির মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

ত্বরান্বিত প্রসার:

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি গতি পায়। এই সময় থেকে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বিভিন্ন স্টার্টআপ এবং বড় কোম্পানিরা ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস চালু করে, যেমন দারাজ, বাগডুম ইত্যাদি। এই প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের নানান রকমের পণ্য ঘরে বসেই কিনে ফেলার সুবিধা দেয়।

ব্যবসা বৃদ্ধির কারণগুলি:

বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ের বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের প্রসার, যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট এই সব মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন সহজ হয়ে ওঠে। এছাড়াও, লজিস্টিক সাপোর্টের উন্নতি, যেমন দ্রুত ও নিরাপদ ডেলিভারি সার্ভিস গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে।

প্রভাব:

ই-কমার্সের এই ব্যাপক প্রসার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। নতুন নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি আরও বেশি ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করেছে, এবং ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।

এই প্রসার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতির পথে এক অন্যতম সুবাদে পরিণত হয়েছে, যা আগামী দিনগুলিতে আরও অধিক উন্নতি ও বিকাশের প্রত্যাশা জাগায়।

উপসংহার:

বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার বিগত কয়েক দশকে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই শিল্পের উন্নয়ন না কেবল ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে সহায়তা করেছে, বরং এটি সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। গ্রাহকদের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা বদলে দেওয়ার পাশাপাশি, এটি ব্যবসায়ীদের নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করেছে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছে। যদিও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল মনে করা হয়, এবং এটি আগামী দিনগুলিতে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল অংশ হিসেবে কাজ করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *